বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

রাণীশংকৈলে সরকারী হাটগুলোতে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি::

কোভিড-১৯ এর কারণে সমগ্র দেশ এক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে, এর মাঝে উত্তরবঙ্গের সীমান্ত ঘেঁষা ঠাকুরগাঁও এর রাণীশংকৈল উপজেলা পড়েছে আরো বেশি বিপর্যয়ের মধ্যে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক পযার্য়ে পৌঁছে গেছে। দিনমজুরসহ গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা পঙ্গু হয়ে পড়েছে। লাগাতার ভারী বর্ষণের কারণে চাল, ডাল, শাক, সবজিসহ নিত্য পণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ধানের খড় (কাড়ি) অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এত বিপর্যয়ের মধ্যেও সাধারণ মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে মানুষের এই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বেজায় বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে। হাট বাজারে বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের হাসিল (ইজারা) অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই বলে মনে করেন হাট-বাজারের ক্রেতা বিক্রেতারা।

উপজেলা প্রশাসনের ওয়েব সাইট ঘেঁটে দেখা যায়, উপজেলা জুড়ে মোট হাট ১৫টি। এই হাটগুলোর প্রত্যেকটি হাটেই নিয়ম বহির্ভুতভাবে অতিরিক্ত হাসিল আদায় করা হয়। একটি হাটেও উপজেলা প্রশাসনের নুন্যতম নজরদারি নেই। ১৫টি হাটের মধ্যে সর্ববৃহৎ দুটি হাট হল কাতিহার ও নেকমরদ হাট। এর মধ্যে কাতিহার হাট ১৪২৭ সনের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও আইনি জটিলতায় নেকমরদ হাটের ইজারা প্রদান বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে এ হাটটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও হাট-বাজার ইজারা কমিটির সভাপতি মৌসুমী আফরিদার সরাসরি তত্বাবধানে চলছে। এ হাটেও অতিরিক্ত টোল আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটে বিপুল পরিমাণ মানুষের আনা গোনা, কেউ গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, ধানসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে কেউ বা কিনছে। ইজারাদারের টোল আদায়কারী ব্যক্তিরা রশিদ বই ও কলম টেবিল নিয়ে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে গরু ছাগলের হাটের বিভিন্ন স্থানে বসে রয়েছে। যারা গরু বা ছাগল কিনছে তারা হাসিল দিয়ে রশিদ নিচ্ছে ঠিকই তবে রশিদে হাসিল দেওয়া টাকার পরিমাণ লেখা থাকছে না। অন্যদিকে রশিদে হাসিলের পরিমাণ লেখে না দিয়ে আদায় করা হচ্ছে গরু প্রতি ৩২০ টাকা আর ছাগল প্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়াও সাইকেল, ধান, হাঁস, মুরগীর বাজারেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত হাসিল। হাটে কেউ সামাজিক দুরত্ব বা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলছে না। হাট ইজারা না হলেও ইজারা রশিদে ইজারাদারের নাম সম্বলিত রশিদ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে নির্দিষ্ট ইজারাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া আইনি জটিলতায় আটকে যাওয়ায় নিয়মানুযায়ী প্রতি হাটে উন্মুক্ত ডাকে ইজারা প্রদানের নিয়ম থাকলেও নেকমরদ হাটটি বরাবরই রাজীব নামে ব্যক্তিকে হাট ইজারা দিয়ে আসছেন ইউএনও। যা নিয়ে অন্য হাট ইজারাদারদের মাঝে চরম ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে।

উপজেলার রাউতনগর এলাকার গরু ক্রেতা মাসুদ বলেন, বাইশ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাছি গরু কিনে হাটে ইজারা দিলাম ৩২০ টাকা। একইভাবে ঘুনিয়া এলাকার আলম বলেন, একটি গরুতে আগে নিতো ২৫০ টাকা তারপর ২৭০ টাকা। এবারের কোরবানি ঈদের পর থেকে ৩২০ টাকা করে আদায় করছে ইজারাদার। যা অসহনীয়। তিনি আরো বলেন, শুনেছি সরকারী দর মাত্র ২৩০ টাকা অথচ তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আদায় করছে ৩২০ টাকা। প্রশাসন অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের বিষয়টি জেনেও কিছুই করছে না। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে অতিরিক্ত হাসিল দিচ্ছি।

জেলা প্রশাসকের র্সবশেষ হাসিল আদায়ের অনুমোদিত তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, গরু প্রতি ২৩০ টাকা, ছাগল প্রতি ৯০ টাকা, সাইকেল প্রতি ১১০ টাকা। অথচ জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত হাসিলের দর উপেক্ষা করে গরু প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৩২০ টাকা, ছাগল প্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা এবং সাইকেল প্রতি ২৫০ টাকা।

নেকমরদ হাট পরিচালনাকারী রাজিব এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদার মুঠোফোনে ২টা ২০ মিনিটে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেন নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com